কাকা’কে মনে পড়ে? মনে পড়ে সুন্দর চেহারার রাজকীয় ঐ সাম্বা-বয়কে?
জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ,
কিংবা ফিফার বর্ষসেরা ফুটবল প্লেয়ার!
সর্বোচ্চ ব্যাক্তিগত অর্জন ব্যালনডিওরও হাতে উঠেছে তার।
দেখতে সত্যিকার রাজপুত্রের মতো কাকা ছিলেন অসাধারণ ভদ্রলোক!
আর্জেন্টিনার নামটা আসলেই যেমন চলে আসে ব্রাজিলের নাম। ঠিক দুই দেশের দুই তারকাও ছিলো আলোচনার কেন্দবিন্দু। তাইতো মেসির নাম নিলেই প্রতিপক্ষ হিসেবে নাম আসতো কাকার।
কাকা, যার পুরো নাম রিকার্ডো আইজেকসন ডস সান্তোস লেইতে। ১৮ বছরের এক তরুণ ছোকরা ২০০১ সালে স্বদেশী ক্লাব সাও পাওলোর মূল দলের হয়ে মাঠে নামেন তিনি।
অবশ্য ট্রফি জেতা ততদিনের শিখে নিয়েছেন। ১৫ বছর বয়সেই সাও পাওলো যুব দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতান কোপা ডি জুবেনি ট্রফি। মূল দলের অভিষেক বছরেই দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই গোলে প্রথমবারের মতো টর্নেইয়ো রিও-সাও পাওলো এর শিরোপা এনে দেন কাকা।সে মৌসুমে মোট ২৭ ম্যাচে করেন ১২ গোল।
একজন তরুণ এটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে নজর কারার মতোই পারফর্মেন্স। ইউরোপে উড়ে যাবার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রয়ে গেলেন আরো একটি মৌসুম ঘরের ক্লাবেই। সে মৌসুমে ২২ ম্যাচে ১০ গোল করে ইউরোপে তার চাহিদা যেন বাড়িয়ে নিলেন আরো কয়েকগুণ।
তাছাড়া ২০০২ সালে অনভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদো, রোনাদিনহো, কাফুদের সতীর্থ হয়ে বিশ্বকাপ জয় যেন স্বপ্নের পাখায় যোগ করে এক নতুন পালক। বিশ্বকাপ শেষে ছোট বেলার ক্লাবের মায়া ছেড়ে, পাড়ি জমান ইউরোপে নতুন চ্যালেঞ্জ, নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নেবার স্বপ্ন নিয়ে।
২০০৫ সালে কনফেডারেশন কাপ জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছিল ২০০৬ বিশ্বকাপের। তবে সেবার নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল জিনেদিন জিদানের ফান্সের সামনে, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। আরেকটি বিশ্বকাপ ছুঁয়ে দেখবার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায় কাকার।
জিদান নিজের ঘরে তুলেছিলেন ২০০৬ বিশ্বকাপ।এত অল্প সময়েই এতসব অর্জন যেন ফুটবল বিশ্বকে এক সম্ভাবনারই ইঙ্গিতই দিচ্ছিলো। হয়ত কাকাই পরবর্তীতে হতে যাচ্ছেন সেরাদের সেরা। কাকার ক্যারিয়ার যদি একটা নাটক হয় তবে এই স্বর্ণালি দিনগুলো ছিল নাটকের রাইজিং একশন আর ক্লাইম্যাক্স ধরা যেতে পারে রিয়াল মাদ্রিদে যোগদান।পরবর্তী মৌসুম গুলোতে মিলানের আর্থিক সংকট যেন বারেবারেই প্রশ্ন তুলেছে কাকা তবে চলে যাচ্ছে। হ্যাঁ!
সকল প্রশ্নের অবসান ঘটিয়ে ২০০৯/১০ মৌসুমে ইতালি থেকে স্পেনের উড়াল দেন কাকা। ফ্রেটিগস পিরামিড মতে কাকার ক্যারিয়ার নাটকের ফলিং একশন হয়ত স্পেনে পা রাখার পর থেকেই শুরু হয়। কেননা এরপরই কাকাকে দেখতে হয়েছে নিজের ক্রমাগত বিপর্যয়
নিজের শরীরটা বেইমানি করেছে কিংবা নিয়তি। রিয়ালের আসার পর থেকেই ইঞ্জুরি সমস্যা যেন জেকে বসে কাকার হাটুতে। ইনজুরি সমস্যায় একাদশে নিজের জায়গা হারান মেসুত ওজিলের কাছে। ইঞ্জুরি সমস্যা নিয়েই গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়, ২০১০ সালের বিশ্বকাপে দেশের হয়ে অংশ নিতে। অনুপ্রেরণা ব্রাজিলের হয়ে ২০০৯ এ কনফেডারেশন কাপ জয়।
কিন্তু সে হলো না।
কোচ হোসে মরিনহোর হয়ত তাকে খেলাতে ইতস্তত বোধ করতেন। রিয়াল ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই তাই সাইড বেঞ্চে বসে কাটিয়ে দিতে হয়েছে কাকাকে। ৪ বছরের রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারে তিনি মোটে ম্যাচ খেলেছেন ১২০ টি, গোল করেছেন ২৯ টি।
যা তার পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের পারফরম্যান্সের সাথে তুলনায় বড্ড বেমানান।তবে হয়ত এমনটা হবার ছিল না। হয়ত রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাব লেজেন্ড হিসেবেই তার অবসরে যাবার কথা ছিল৷ ব্রাজিলিয়ান এই রাজপুত্রের রুপকথার মতো শুরু হওয়া ক্যারিয়ার যে লোকচক্ষুর আড়ালে হারিয়ে যাবে এটা হয়ত কখনো স্বপ্নেও ভাবেননি কাকা তথা ব্রাজিল সমর্থকেরা।যদি ভালভাবে বলি তো ফুটবল সমার্থকরা।
তবুও অল্পদিনেই জয় করেছে সব! সব মানে সবই!…আর সেই সবের মাঝে সবচেয়ে বড় জয়টা কাকা করেছে ফুটবল প্রেমিদের মন!