রিয়ান বিন কবির,স্পোর্টস ডেস্ক
আগামীকাল রাত ৮ঃ১৫ মিনিটে মাঠে নামছে দুই চির প্রতিদ্বন্দী বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ।এল ক্লাসিকো
মানে ফুটবল প্রেমীদের রক্তে উত্তেজনার নাচন বয়ে দেওয়া একটা শিহরন।পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন।দল
দুটির ফর্ম থাকুক আর নাই থাকুক।ম্যাচের ফলাফলের প্রভাব বেশি হোক বা কম।বার্সা-রিয়াল দ্বৈরথ মানেই
বাড়তি উন্মাদনা,বাড়তি রোমাঞ্চ।আলফ্রেদো দি স্তেফানো থেকে জোহান ক্রুইফ।রিয়ালের সেই গ্যালাকটিকো
যুগ চাপিয়ে মেসি,নেইমার,সুয়ারেজ জুটি।মেসি-রোনালদোর ভূবন ভুলানো টাইমলাইন থেকে শুরু করে ডাগআউটে
গার্দিওয়ালা-মরিনহোর স্নায়ুযুদ্ধ।ভক্তদের যুক্তির বিপরীতে যুক্তি,তর্কের বিপরীতে পাল্টা তর্ক।সবকিছু
আস্তো একটা জেনারেশনকে ফুটবলে মাতিয়ে রেখেছে দিনের পর দিন।এখনো প্রহর শেষের কাল বেলায় সবকিছু
স্তব্দ হয়ে গেলে এল ক্লাসিকো জাগিয়ে রাখে সবাইকে।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে তিন বছরের ব্যবধানে স্পেনে প্রতিষ্ঠা হয় ক্লাব দুটি। ১৮৯৯ সালে ফুটবলে
যাত্রা করে এফসি বার্সেলোনা আর ১৯০২ সালে আবির্ভাব হয় রিয়াল মাদ্রিদের। ১৯০২ সালে প্রথমবার
মুখোমুখি হয় দল দুটি। কালক্রমে স্পেনে এই দল দুটিই হয়ে ওঠে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী।এই প্রতিদ্বন্দীতার পিছনে
রয়েছে মাঠের খেলার পাশাপাশি মাঠের বাইরের রাজনীতিও।
রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে।স্পেনের তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী মূলত
মাদ্রিদ-কেন্দ্রিক হওয়াতে রিয়াল মাদ্রিদকে কখনও শাসকের রোষানলে পড়তে হয়নি।তৎকালীন সময়ের
স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল ফ্রাংকো তার সময়ে রিয়াল মাদ্রিদের ইউরোপীয় পর্যায়ে অর্জিত সাফল্যে বেশ
উচ্ছ্বসিত হন।তার এরকম একটি নিজ অঞ্চলের ক্লাবের প্রয়োজন ছিল।যার সাফল্যকে তিনি নিজ শাসনের
সাফল্য হিসেবে প্রচার করতে পারবেন।
জেনারেল ফ্রাংকোর সময়ে স্প্যানিশ জাতীয়তাবাদের বিরোধিতা যারা করেছিল তাদের উপর চরম অত্যাচার নেমে
আসে।কাতালোনিয়ার নাগরিকেরা চেয়েছিল স্পেন থেকে আলাদা হতে।আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে।সেজন্য
তাদেরকে দমিয়ে রাখা হয়।সেই সাথে রাজনৈতিক অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়।স্বায়ত্তশাসিত সকল কাতালান
প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয়।এমনকি কাতালান ভাষার ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়।যেহেতু জেনারেল
ফ্রাংকোর চোখে কাতালান স্বাধীনতাকামীরা ছিল 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' তাই অনেক কাতালান নাগরিককে জেলে পুরে
রাখা হয়।সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে হত্যা করা হয় অনেককে। কাতালান নাগরিকদের উপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন
সেসময়ের নিত্য নৈমিত্তিক ঘঠনা ছিল।
১৯২৫ সালের ১৪ জুন, স্টেডিয়ামের দর্শকগন স্পেনের জাতীয় সঙ্গীতের ব্যঙ্গ করে এবং আরেক স্বৈরশাসক
প্রিমো দে রিভেরার একনায়কতন্ত্রের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে, স্টেডিয়ামটিকে
প্রতিহিংসামূলকভাবে ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বার্সা ক্লাব প্রেসিডেন্ট গাম্পারকে
পরিচালকের পদ হতে সরে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়।
১৯৫০ এর দশকে, আলফ্রেদো দি স্তেফানোর ট্রান্সফার নিয়ে ওঠা বিতর্ক দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে
আরও বাড়িয়ে তোলে। যিনি শেষপর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন এবং পরবর্তীতে তাদের সাফল্যের মূল
চাবিকাঠি হয়ে ওঠেন।এইভাবে কালে কালে বহু ঘঠনা জন্ম দিয়েছে দুই দল।যার ফলে দিনে দিনে
প্রতিহিংসা,ক্ষোভ,প্রতিদ্বন্দীতার কালক্রমে দুই দলের এই শতবর্ষী দ্বৈরথ এখন রুপ নিয়েছে একটা ফুটবল
মহারণে।